সালাম একটি সুন্নত আমল। একটি শান্তির বার্তা। প্রতিদিনের সম্বোধন। প্রতিক্ষণের সম্প্রীতি। মুমিন মানেই সালামের আমল। ইসলামের সৌন্দর্যের একটি হল সালাম। সাহাবায়ে কেরামের পক্ষ হতে রাসুল সা.কে প্রশ্ন করা হলো, ইসলামের কোন আমল সুন্দর বা সর্বোত্তম? জবাবে শন্তির বার্তাবাহক রাসুলুল্লাহ বললেন, অভাবীদের পানাহার করানো, আর পরিচিত অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়া। (আবু দাউদ- ৫১৯৬) সালামের প্রচারের মাধমে সম্ভব শান্তির সুখপাখি উড়ানো। সালামের আমল দ্বারা অবস্থা প্রকৃতি সমাজ ও ব্যক্তির মাঝে শান্তি ও পরস্পর হৃদ্যতা ভালোবাসা বিলাস তৈরি সম্ভব। রাসুলুল্লাহ নিজের জীবনের আমল বাস্তবতায় তা করে করে দেখিয়েছেন। কেমন জানি পরস্পর ভালোবাসার মানদ-ই নির্ধারণ করেছেন সালামকে। হযরহ আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ বলেন, তোমরা কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না; যতক্ষণ না নিজেদের মাঝে ভালোবাসা আর শান্তির পরিবেশ গড়ে তুলবে। অতপর রাসুল নিজেই বলেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু বলে দিবো যা তোমরা আমল করলে আত্মার সর্ম্পক স্থাপন হবে- তাহলে শোন নিজেদের মাঝে সালামের প্রচার ঘটাও। (ইবনে মাযা- ৩৮২৩) উল্লিখিত দু’টি হাদীস দ্বারা একথা প্রমাণিত হয় শান্তির জন্য সালামের প্রচার প্রসার ঘটানো উচিত। এছাড়াও যদি সালামের অন্যান্য দিকগুলো দেখি তবুও দেখবো যে সালাম কতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। বিদেশি সভ্যতা সংস্কৃতির অনুসরণে এই যুগে আমরা সালামকে ভুলতে বসেছি। অনর্থ কিছু বিদেশী শব্দউচ্চারণে সম্বোধন করতে থাকি। সকালে দেখা হলে গুড মর্নিং, শুভসকাল এগুলোর দ্বারা ফায়দাটা হচ্ছে কি? তাতে কি আছে আমাদের সভ্যতাসংস্কৃতি! নাকি সওয়াব! তাহলে কেন এগুলো হবে আমাদের নিত্য পালনীয়? এমনিভাবে গুড আফটারনুন, গুড ইভিনিং, গুডনাইট নয় সালামকে করতে হবে আমাদের প্রাককথা বা ইতিকথা।
সালামের ফযিলত সম্পর্কিত হাদীস রয়েছে প্রচুর। সেই ফযিলতে উৎসাহিত হয়ে সাহাবায়ে কেরাম সমাজের মধ্যে সালামের রব উঠিয়েছেন। হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন রা. হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহকে সালাম দিল আসসালামু আলাইকুম; রাসুল তার জবাব করে বলেন, তার দশটি সওয়াব হলো। আরেক জন সালাম দিল আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ; উত্তর করে তিনি বললেন, তার বিশটি সওয়াব হলো। আরেকজন আসলো সে সালাম দিল, আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ উত্তর করে তিনি বললেন- তার ত্রিশটি সওয়াব হলো। অন্য রেওয়ায়াতে আছে সালাম দিল আসসালু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ওয়ামাগফিরাতুহ; উত্তর করে রাসুল বলেন, তার চল্লিশটি সওয়াব হলো। (আবুদাউদ : ৫১৯৪)
হাদীস আমাদের বলে, তারা বেশি বেশি বাজারে যেতেন, যেন বেশি বেশি সালাম বিনিময় করতে পারেন। সালাম দ্বারা চতুর্মুখি ফায়দা হাসিল। কেননা সালামের দ্বারা আল্লাহর যিকির হয়। দ্বিতীয়ত অপর ভাইয়ের সঙ্গে ভালোবাসা স্থাপিত হয়। তৃতীয়ত অপরের জন্য শান্তির দোয়া করা হয়। চতুর্থত একথার ওয়াদা করা হয় যে, তুমি আমার হাত পা মুখ থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ। এতোগুলো পুণ্যের কাজ পৃথকভাবে করতে কতো সময়ও শ্রমের প্রয়োজন। অথচ রাসুলুল্লাহর সুন্নত বাস্তবায়ন করার দ্বারা এক সাথে নিমিষে অনেকগুলো সওয়াব আমলনামায় লেখা হচ্ছে।